Saturday, July 27, 2024
spot_img

চলতি অর্থবছরের জন্য বিপিসির প্রাক্কলন ৭২ লাখ টন জ্বালানি চাহিদার সিংহভাগই ডিজেল

Originally posted in The Bonikbarta  on 15 December 2022

দেশে চলতি অর্থবছর ৭২ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এর মধ্যে ডিজেলই ব্যবহার হবে ৫০ লাখ ৪০ হাজার টন। বিশ্বজুড়ে জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার কারণে কম খরচে ডিজেল আমদানির জন্য খোঁজা হচ্ছে বিকল্প উৎস। জাহাজভাড়াসহ অন্যান্য খরচ সাশ্রয়ী হওয়ার সুযোগ থাকায় এ নিয়ে ভারতের সঙ্গেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে রাশিয়ার তেল পরীক্ষা করা ছাড়াও ব্রুনাই থেকে আমদানির সম্ভাবনা যাচাই করা হচ্ছে।

বিপিসি থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত অর্থবছর দেশে মোট জ্বালানি তেল ব্যবহার হয়েছে ৬৯ লাখ ১৫ হাজার টন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই ছিল ডিজেল। বাকি ৩০ শতাংশ ফার্নেস অয়েল, পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন ও জেট ফুয়েল। জ্বালানি তেল ব্যবহারের খাত বিবেচনায় নিলে সবচেয়ে বেশি পরিবহন খাতে ৪২ লাখ ৬০ হাজার টন (৬১ দশমিক ৬১ শতাংশ), কৃষি খাতে ১১ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ টন (১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ), বিদ্যুৎ খাতে ৮ লাখ ৮৩ হাজার টন (১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ), শিল্পে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টন (৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ) আর বাকিটা ব্যবহার হয়েছে গৃহস্থালি ও অন্যান্য খাতে ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, দেশে জ্বালানি চাহিদার ৯২ শতাংশই আমদানি করে মেটানো হচ্ছে। বাকি ৮ শতাংশ আসছে স্থানীয় উৎস থেকে। পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আরব আমিরাত, কুয়েত, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফার্নেস অয়েলের ব্যবহার বাড়তে থাকায় আমদানি তালিকার শীর্ষে থাকা ডিজেলের আমদানি কমে এসেছে। পরিবহন ও সেচে ডিজেলের ব্যবহার কমে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে।

এনবিআরের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার টন ডিজেলের শুল্কায়ন করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭ শতাংশ কম। ডিজেল আমদানিতে আগে শুল্ক-কর ৩৪ শতাংশ নেয়া হলেও ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমিয়ে বর্তমানে ২২ দশমিক ৭৫ শতাংশ ঠিক করা হয়েছে।

বিপিসির তথ্যানুযায়ী, দেশে জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা ১৩ লাখ টন। এর মধ্যে ডিজেলেরই ধারণ ক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে ৬ লাখ টনের। ২০৩৯ সালের সালের মধ্যে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবচেয়ে জরুরি জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, সেচ, সার, বীজ ও কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। এক্ষেত্রেও সবচেয়ে বড় জ্বালানি উপকরণ ডিজেল। দেশে ডিজেলের প্রায় ২৪ শতাংশই ব্যবহার হয় কৃষিতে। কৃষিতে সারা বছর জ্বালানি তেলের চাহিদা থাকলেও এ চাহিদা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় কৃষি সেচ মৌসুম ডিসেম্বর-এপ্রিল পর্যন্ত।

বিপিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মজুদ নিরাপদ রাখার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে। ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি থেকে তেল আমদানি বাড়াতে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প চলমান। ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ২০১৭ সাল থেকেই নিয়মিত পরিশোধিত জ্বালানি তেল আনছে বিপিসি। তবে সেটি বছরে এক লাখ টনেরও কম। নদীপথেও ট্যাংকারের পরিবর্তে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি পরিবহনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এবং পিতলগঞ্জ থেকে কুর্মিটোলা পাইপলাইন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে নেয়া হয়েছে ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্প।

এদিকে চলতি মাস থেকে কৃষি সেচ মৌসুম শুরু হয়েছে। আগামী বছরের মে মাসে মৌসুম শেষ হবে। এ ছয় মাসের জন্য আট বিভাগের জন্য ২৭ লাখ ৫৯ হাজার টন ডিজেলের চাহিদা প্রাক্কলন করেছে বিপিসি। এটি ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে ৮ লাখ ৯৯ হাজার টন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ লাখ ৮৮ হাজার টন, রাজশাহী বিভাগে ৩ লাখ ৮২ হাজার টন, খুলনা বিভাগে ৩ লাখ ৪৭ হাজার টন, রংপুর বিভাগে ২ লাখ ১৩ হাজার টন, বরিশাল বিভাগে ১ লাখ ১৮ হাজার টন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ লাখ ১৫ হাজার টন ও সিলেট বিভাগের জন্য ৯৪ হাজার ৭৫৫ টন ডিজেলের চাহিদা ধরা হয়েছে।

রাশেদ এইচ চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরো