Originally posted in বণিকবার্তা on 06 March 2022
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য গত বছরের জুনে ভারতীয় কোম্পানি এইচ এনার্জির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছিল পেট্রোবাংলা। এ চুক্তির আওতায় মূলত ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। সেই সময় এইচ এনার্জির পক্ষ থেকে ২০২২ সাল নাগাদ গ্যাস রফতানির বিষয়টি জোর দিয়ে বলা হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি সইয়ের নয় মাস পেরোলেও এখনো এলএনজি আমদানির বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি পেট্রোবাংলা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, এইচ এনার্জির সঙ্গে এলএনজি আমদানির যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছিল, সেটির বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। একটি কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া এখন চুক্তিসংক্রান্ত দুদেশের নানা বিষয় পর্যালোচনা করছে পেট্রোবাংলা।
এলএনজি আমদানির বিষয়ে এইচ এনার্জি-পেট্রোবাংলা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারলেও বাংলাদেশে গ্যাস রফতানির বিষয়ে ভারতীয় কোম্পানিটি তাদের কাজ অনেকটাই এগিয়ে রাখতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ভারতের প্রকল্প এলাকায় পাইপলাইন নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। জানা গিয়েছে, প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২২ সালে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করতে না পারলেও নির্মাণকাজে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে এইচ এনার্জির। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এইচ এনার্জি বাংলাদেশে বার্ষিক দুই মিলিয়ন টন পর্যন্ত এলএনজি রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এলএনজি সরবরাহের লক্ষ্যে এইচ এনার্জি রাজ্যটির পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কানাই চট্টায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে। সেখান থেকে গ্যাস সরবরাহের জন্য দীর্ঘ ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ১৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন। সেখান থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের খুলনায় এ গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল পেট্রোবাংলার।
তবে ভারত থেকে গ্যাস রফতানির জন্য এইচ এনার্জি পাইপলাইন নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিলেও বাংলাদেশ অংশে এখনো এর কাজ শুরুই হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু বাংলাদেশে এখনো এ কাজের কোনো অগ্রগতি নেই, ফলে এলএনজি আমদানি চুক্তি করা হলেও খুব দ্রুত যে ভারত থেকে গ্যাস আসছে না তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। ভারত থেকে এলএনজি আনার জন্য বাংলাদেশ অংশে যে পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প সেটির জন্য এখনো অর্থের সংস্থান হয়নি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাতক্ষীরা থেকে খুলনা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করবে রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। এ পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা। জিটিসিএলের তথ্য বলছে, সাতক্ষীরা-খুলনা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণে প্রকল্পে রুট জরিপকাজ শেষ হয়েছে। ভারতের সঙ্গে জিআইএ সই হওয়া সাপেক্ষে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। এ প্রকল্পে বিদেশী সহায়তার জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের সংশোধিত পিডিপিপি গত বছরের ২৪ জুন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে।
ভারত থেকে কবে নাগাদ বাংলাদেশে গ্যাস আমদানি করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না পেট্রোবাংলা। সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলছেন, এলএনজি আমদানির জন্য সমঝোতা সই পেট্রোবাংলার সঙ্গে হলেও এখন বিষয়টি দেখবে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। অন্যদিকে, এই লাইন নির্মাণের কাজ করবে জিটিসিএল। ফলে সবকিছু নির্ভর করছে তাদের ওপর।
এইচ এনার্জি পেট্রোবাংলার সঙ্গে যখন এলএনজি রফতানির সমঝোতা সই করেছিল তখন তারা জানিয়েছিল, খুব দ্রুতই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হবে পেট্রোবাংলার সঙ্গে। সেটি করার পর ২০২২ সাল নাগাদ এলএনজি রফতানি কার্যক্রম শুরু করবে তারা। তবে নির্ধারিত বছরের তিন মাস পেরোলেও এখনো এ বিষয়ে খুব বেশি দেনদরবার দেখা যাচ্ছে না কোনো পক্ষ থেকেই।
দেশে গ্যাস সংকট মেটাতে দীর্ঘমেয়াদি আমদানি চুক্তির পাশাপাশি উচ্চমূল্যে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে। বেশি দাম দিয়ে এলএনজি কিনে কম মূল্যে বিক্রি করায় এরই মধ্যে পেট্রোবাংলা ব্যাপকভাবে অর্থসংকটে পড়েছে। ফলে আমদানি প্রক্রিয়ায় সাশ্রয়ী মূল্যে এলএনজি কিনতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে গুরুত্ব দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে কাতারের সঙ্গে বিদ্যমান দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় অতিরিক্ত এক মিলিয়ন টন গ্যাস কেনার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারত থেকে এলএনজি আমদানি করা গেলে দেশের বিদ্যমান গ্যাস সংকট কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।